কুয়াকাটা থেকে মোঃ জাহিদ,
কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ছোট্র একটি ডোবা। ওই ডোবা দিয়ে পৌরসভার পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ডোবার সাথে কুয়াকাটা খালের সংযোগ। প্রথমে ডোবার সাথে খালের সংযোগস্থল বন্ধ করে দিয়ে পৌর ভবন নির্মাণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৬ ইঞ্জি একটি পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা করে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪০বছর ধরে ডোবাটির কোন মালিক ছিল না। বর্তমানে ওই ডোবার মালিক দাবীদার রাখাইনদের বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ,হাজী আঃ মন্নান হাওলাদার, ইলিয়াস হোসেন, সোহেল হোসেন মোঃ সাইফুল ইসলাম, তেমং রাখাইন ও শহিদ দালাল। কাগজে এদের জমির মালিকানা দাবীর কোন অস্থিত্ব না থাকলেও বিএস জরিপে এরা সবাই এ জমির মালিক।
এ জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় বিএস জরিপ মুলে ভূমি কর্তৃপক্ষ ওই ডোবা বিক্রির অনুমতিও দিয়েছেন। আর এই ডোবাটি বিক্রিও হয়েছে চড়া দামে। বর্তমানে ডোবাটির বায়না দলিল মূলে মালিক কুদরাত ই খোদা নামে ঢাকার এক ব্যক্তি। তিনি ওই ডোবা বালু দিয়ে ভরাট করছে। এতে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশ, পৌর পরিষদের সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলর, প্রভাবশালী কয়েকজন ভূমি দালাল। দখল বানিজ্যের এই সূযোগে পৌর আওয়ামী লীগের একটি অংশ দলীয় অফিসের কথা বলে ওই ডোবাটির দক্ষিন পাশ দিয়ে বেড়া দিয়ে তাদের দখলে নিয়েছেন। ওই ছোট্র ডোবাটির দখলকে কেন্দ্র করে চলছে টাকার ছড়াছড়ি। দেন দরবার ও দর কষাকষি।
পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে ডোবা ভরাট করা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ দায়সারা বক্তব্য দিয়েই তাদের দ্বায় এড়িয়ে গেছেন। অপরদিকে পুরাতন মন্দিরের জমি দখল হওয়ার দাবী করলেও এ নিয়ে রাখাইনদের মন্দির কমিটির প্রতিনিধিদেরও তেমন একটা তোরজোড় লক্ষ করা যাচ্ছে না। তার কারন এই ডোবা ও মন্দিরের জমি বিক্রির সাথে রাখাইনদের প্রভাবশালী একটি অংশ জরিত রয়েছে এমনটাই দাবী অপর একটি অংশের।
রাখাইনদের দেবালয়, পাড়ার জমি কৌশলে অসাধু রাখাইনদের একটি অংশের সহযোগিতায় ভূমি দালাল চক্র এভাবেই প্রতিনিয়ত বিক্রি করে চলছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা না করেই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়ে এসব জমি ও ডোবা বিক্রিতে সহযোগিতা করছেন। আর এতে করে ভূমি ব্যবস্থাপণা ভেঙ্গে পড়েছে। সৃস্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও মন্দির ও ডোবা দখল বানিজ্য থামছেনা কোন ক্রমেই।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, মহিপুর থানা সদরের বিএনপি নেতা ও ভূমির দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা, সোহেল হোসেন,লতাচাপলী ইউনিয়নের সাবেক শ্রমীক লীগ নেতা আলীসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কতিপয় লোকজন পরিত্যক্ত ডোবাটির মাঝখানে বালু দিয়ে ভরাট করছে। ডোবার দক্ষিন পাশে পানি নিষ্কাশনের কালভার্টসহ বেড়া দিয়ে নিজেদের দখলে নিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার,সাবেক প্যানেল মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পান্না হাওলাদার,সাবেক কাউন্সিলর আঃ রহিম হাওলাদারসহ কয়েকজন। বেড়া দেয়ার কারন জানতে চাইলে তারা জানান পৌর আওয়ামী লীগের অফিসের জন্য তারা এ ডোবার আংশিক দখলে নিয়েছে।
এসময় তারা আরও জানান মালিকানার দাবী নামার ফয়সালা হলে পরে তাদের কাছ থেকে কিনে নিবেন তারা। তবে ওই অংশের মালিক দাবীদার ওয়ের্স্টান রিয়েল এস্টেটের মালিক সাইফুল ইসলামের প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের অফিস করার কথা বলে তাদের জমিতে বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তিনি দাবী করেন তার জমির কাগজপত্র সবই হাল নাগাত রয়েছে।
ডোবার অপর মালিক দাবীদার ইলিয়াস হোসেন বলেন তার নামে ১৬ শতক জমি বিএস জরিপ রয়েছে। সেই বিএস জরিপ বলে তিনি ওই ১৬ শতক জমি ৬৫ লাখ টাকা মুল্য নির্ধারন করে কুদরাত ই খোদার সাথে বায়না চুক্তি করেছেন। ইলিয়াস হোসেন নিজেই স্বীকার করেছেন তার ক্রয়কৃত জমি কাগজে এখন পর্যন্ত অস্থিত্বহীন। তবে আদালতে তেমং রাখাইন জমির মালিকানার দাবীতে মামলা চালান। ওই মামলায় তেমং রায় পেলে তার মালিকা স্বত্ব হবে বলে তিনি স্বীকার করেন।
স্থাণীয় বিএনপি নেতা হাজী আঃ মান্নান হাওলাদারের কাগজপত্রে ওই ডোবায় তার মালিকানার কোন অস্থিত্ব না থাকলেও তার নামে ২২ শতক জমি বিএস জরিপ হয়েছে। তার নামে যে জমি বিএস জরিপ হয়েছে ওই জমি নতুন নির্মিত পৌর ভবনের পাশ ঘেঁষে কুয়াকাটা খাল লাগোয়া। কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই জমি বিক্রির অনুমোদনও দিয়েছে। ওই অনুমোদনের বলে তিনিও কোটি টাকার চুক্তিতে কুদরাত ই খোদার কাছে বিক্রি করেছে। মন্নান হাওলাদার জমি বুজিয়ে না দিলেও বিএস জরিপ যেখানে রয়েছে সেখান থেকে না নিয়ে ভূমি দালাল চক্র ডোবা দখল করে ভরাট করছে। কুয়াকাটার পুরনো ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহারের পাশে থাকা ডোবা ও মন্দিরের জমিতে বালু ভরাট করে দখলে নিলেও এ নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই। স্থানীয়দের মতে এযেন মগের মুল্লুক। যে যেমন খুশি তেমন দখল করছে। দেখার কেউ নেই।
বিএস জরিপ রেকর্ডে ৮৫ শতক জমি এ বৌদ্ধ বিহারের নামে থাকলেও পরিত্যক্ত এ বিহারটির উত্তরদিক আগেই দখল হয়ে গেছে। এখন দক্ষিণ পাশে এবং প্রবেশপথের পশ্চিম দিকে বালু ভরাটের কাজ চলছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই রাখাইন বৌদ্ধবিহার এলাকার সংস্কারের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ জটিলতায় সংস্কার করা হয়নি। এখন ফ্রি-স্টাইলে দেবালয়ের এই জমি বৌদ্ধমঠ, বিহারসহ দখল শুরু হয়েছে। পুরনো বৌদ্ধবিহার কমিটির সভাপিত এমং তালুদার জানান, তিনি তাঁদের বৌদ্ধবিহার এলাকার জমির সীমানা বাদ দিয়ে ভরাট কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু তারা শুনছেন না। স্থানীয়রা জানান কুয়াকাটার মহাসড়ক প্রশস্থকরন কিংবা পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ডোবার ওই জায়গা এখনই সংরক্ষন করা প্রয়োজন।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি দুই দফা কাজ বন্ধ করেছি। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে তেমং নামের এক রাখাইন এখানে জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, তিনি বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিবেন। বৌদ্ধ বিহারের জায়গা দখলের সুযোগ নেই।
Leave a Reply