নওগাঁ সংবাদদাতাঃ চাদরে মোড়ানো লাশ। পাশেই কাঁদছিল একটি শিশু। কাঁদতে কাঁদতেই হাসপাতালের স্ট্রেচারে থাকা মানুষটির চোখে-মুখে বুলিয়ে দিচ্ছিল হাত। আর বলছিল- ‘আমার আব্বু কথা বলে না কেন? আব্বুকে কেউ জাগিয়ে তোলো। বাবা কি মারা গেছে? আর কি কথা বলবে না?’

হৃদয়স্পর্শী এমন ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ২০২১ সালের ৫ জুলাই ভাইরাল হয়েছিল সেই ভিডিওটি। শিশুটির এ ভিডিওটি দেখে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

হাজারো মানুষকে আবেগ লাগানো সেই শিশুর নাম মরিয়ম খাতুন। তার বাবা নওগাঁর পোরশা উপজেলার কলোনিপাড়ার মুজিবর রহমান। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

মুজিবর ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন স্ত্রী তানজিলা বেগম। সে সময়ই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিবরের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। এবার পরিবারটি পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

রোববার সকালে উপজেলার নীতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণপুর কলোনিবাজার গ্রামে মুজিবরের বাড়িতে উপস্থিত হন নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ। তিনি মুজিবরের স্ত্রী তানজিলার হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুটি গাভি, দুটি বাছুর ও এক মাসের গো-খাদ্য।

প্রশাসনের উদ্যোগে গরু রাখার জন্য বাড়ির সঙ্গে একটি গোয়ালঘরও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

তানজিলা বেগম বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমরা অনেক অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে আজও তার বাবার কথা বলে। মাঝে মাঝে ‘মেয়েটা বলে আম্মু আব্বু কি আর কোনোদিন ফিরে আসবে না?’ এসব কথা বলে মেয়েটা আমার অনেক কান্না করে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

ডিসি হারুন বলেন, আমরা চেয়েছি এ পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে আয়বর্ধক কিছু একটা করে দিতে। সেই সিদ্ধান্ত থেকে অসহায় পরিবারটিকে দুটি গাভি ও দুটি বাছুর উপহার দেওয়া হল। আশা করি, এই গাভি ও বাছুর লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারবে তারা। এছাড়া মরিয়মের মায়ের জন্য বিধবা ভাতারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।