বাংলাদেশ খবর ডেস্ক,
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে তুরস্ককে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফরে আসা তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগ্লু বুধবার সকালে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্যও দেশটিকে আহ্বান জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার এ তথ্য জানিয়েছেন। মেভলুত পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মেভলুত চাভুসগ্লু বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আমাদের দেশ কাজ করবে। আর আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশে সমরাস্ত্র, স্বাস্থ্য ও নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ আছে দেশটির।
জবাবে মেভলুত চাভুসগ্লু প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মূল্য দেয়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার তার দেশ সেটা করবে। জ্বালানি থেকে পর্যটন সব খাতেই তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলেও জানান তিনি। মেভলুত বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে মার্চে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনা মহামারী মোকাবেলায় শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসাও করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান সেখানে ছিলেন।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, আমরা তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য, কোভিড-১৯ ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। আমরা তুরস্কের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধু ও কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য দুই দেশে উন্মোচন করা হবে।মেভলুত চাভুসগ্লু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান সূর্য। সব দেশের জন্য বাংলাদেশ আজ মডেল। তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বৃহদায়তন শিল্প, স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
মেভলুত বলেন, তুরস্কের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। দামও অত্যন্ত সুলভ। এগুলো কিনতে কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। বাংলাদেশ এ সুবিধা নিতে পারে। তিনি বলেন, সমরাস্ত্রের সবকিছু আমাদের দেশ তৈরি করে না। তবে প্র?য়োজনীয় সমরাস্ত্রের ৭৫ শতাংশ নিজেরাই তৈরি করে থাকি। এ খাতে তুরস্ক অনেক বিনিয়োগ করেছে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুরস্ক যৌথভাবে পণ্য উৎপাদন করছে।তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পের বেশির ভাগ প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। তবে তুরস্কের এ খাতে দক্ষতা আছে। তুরস্কের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর অন্যতম এবং চীনের পরেই তুরস্কের অবস্থান। বাংলাদেশ আগ্রহী হলে তার দেশ এ খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, উভয় দেশে অচিরেই বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলার হবে; যা গত বছর ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার দেশ রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াটাই মূল সমাধান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তুরস্ক। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে যথেষ্ট করছে না। এ নিয়ে আমরা শুধু কথা শুনতে চাই না, আমরা কাজেও তার প্রতিফলন দেখতে চাই।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে জাতিসংঘ, আইওএম, ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ নেয়া দরকার। তারা যেন ভালো থাকেন, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন।তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিকেলে বারিধারায় তুরস্কের নতুন নির্মিত দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Leave a Reply